রহস্যময় কুয়া ও আরেকটি লেখা





রহস্যময় কুয়া


প্ল্যাটিনাম না কিনতে পেরে আঙুলে অ্যালুমিনিয়াম রিং বানিয়ে পরলাম
পাকস্থলীর ফাঁক থেকে বোয়ালের ঝাল কি কেউ ব্যাখ্যা করতে পারে

অতীতের নিখুঁত ইট শহুরে অন্ধকার যখন লোহার কারখানা থেকে শ্যাওলা চাঁছা হচ্ছে
ভবিষ্যতের গ্রাম্য ইট সেয়ানা ১ লোক যখন ভিখারীর ধূর্ত হাতে ভারী কফিমগ

১ নতুন সম্পর্ক সর্বদাই পুরানো কোনো সম্পর্ককে খুন করে কাঁচা চিবিয়ে খায়
নতুন সময়ের গায়ে পুরানো সময়ের রক্তাক্ত ছাল পরানো থাকে
কুয়ায় তলিয়ে থাকে নখদন্তময়ী বিধবার নোংরা থান আর পড়শির বিশ্বস্ত দার্শনিকতা

ঐতিহাসিক গসিপ মানে কন্ডোমবিরতির আগে ১টি সুসজ্জিত জিরাফ লাগানো
অসামাজিক শীৎকারের অর্থ মাটির সাপ প্লাস্টিকের অধ্যায়ে ঢুকল ইতিহাস যতদূর অ্যান্টিসেমেটিক
কুয়ায় তলিয়ে থাকে লোলচর্ম কুমারীর প্যাড আর গেরস্থের ভৌগোলিক নিরাপত্তাবোধ

জীবন ভারতীয় জীবন না কি একটুও পাকিস্তানি নয়
জীবনের দিক থেকে সময়রা কোনোদিন ১ হবে না

কনেবউয়ের সোনার সামনে লণ্ঠন ধোরো না
ইট দেখে সভ্যতার বয়স মেপো না

এ কাহিনির প্রাণীতত্ত্ব বুঝাতে গিয়ে দেখলাম
ভূ-ভারতে প্রাণী সবকিছু প্রাণ নেই এমন কিছু নেই

কিংবা অতীতের বাতাস আর ভবিষ্যতের হাওয়া যখন একাকারে হাহাকার করছে
আমার কবিতায় আমি অনুপ্রবেশকারী আমারই কবিতায় আমি বিচ্ছিন্নতাবাদী
ছ্যাঁকা খাওয়ার ভয়ে আমি বর্তমানের গিয়ার প্রায় কিছুই বদলাইনি




ব্যবস্থিত ওষুধ


১টা লোকের বাঁচাকে কোনো লোক আজ অবধি বুঝতে পারেনি

কিছু লোকের স্বপ্নে আবার তাদের নিজেদের কোনো দোটানা থাকে না
মধু আনতে গিয়ে তারা মৌমাছি হয়ে শেষে ঘরে ফিরে আসে

‘এই নিয়ে ৭টা গার্লফ্রেন্ড গেল’
‘জানি তুই অনেককিছু ছেড়ে আসা মাল’
‘তুই তো সাবঅল্টার্ন বাল’
‘ও বিকিনি পরেনি কিন্তু স্যুইমিং পুল থেকে উঠে এসেছিল’

পৃথিবীকে ঘেন্না আর পৃথিবীর প্রত্যাখ্যান আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই
আমার ব্যক্তিগত অতৃপ্তির ওষুধ কিছু নেই
শুধু চাই জীবনের পথটুকু অন্তহীন হোক

এই যে কিছু লোক মায়ের ইউটেরাস ছেড়ে আজীবন বেরোতে পারেনি
তা বলে কি তুই নিজে দল পাকাবি না কি
চা দোকানকে কফিশপ করে টি-সার্ট পরে দ্যাখাবি কি চর্বিভরা মিডিল ফিঙ্গার

‘বঙ্গের বধূ পোঁদে তার শুধু অ্যাসফাকিং-এর মধু’

বইদোকানের ধারেকাছে নেই কোনো আত্মহত্যার উপায়
ফাক্‌ ইউ-এর যেহেতু কোনো বকধার্মিক হয় না
আমার কাঁচাপাকা দাড়ি ব্লেডে একটু জল দিলে খসে পড়ে যায়

যে ওষুধের অসুখ নেই তাকে তো তুই জানতে পারছিস

ভালবাসায় তাকে আমি পেরোতে পারিনি
লম্বা করে হাত ছড়ালে নিজেকে আজ জীবনভূক পাখি মনে হয়


4 comments:

  1. “পৃথিবীকে ঘেন্না আর পৃথিবীর প্রত্যাখ্যান আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই
    আমার ব্যক্তিগত অতৃপ্তির ওষুধ কিছু নেই
    শুধু চাই জীবনের পথটুকু অন্তহীন হোক"

    কবিতায় মেটাফোর থাকলেও বোধের অবিমিশ্র দার্শনিকপ্রজ্ঞা অবশ্যই আছে, যার বিস্তৃতি ও নৈর্ব্যক্তিক স্থিতি নাড়া দ্যায়। বিশেষণ ব্যবহারের এমন অভিক্ষেপ ও চিরাচরিত রীতির উল্লম্ফন স্বাভাবিক না হলেও কবিতায় স্বাভাবিকতা হারায়নি। নিজস্ব মেজাজটি ঠিক।

    ReplyDelete
  2. ভিখারীর হাতের ভারী কফিমগটাই নির্দেশ করে এ ইমারতের ভিতে নতুন ইটেরা শুয়ে আছে । যে রাজহাঁসের মতো অতীতের পাঁক নয় , জলে মিশে থাকা শুধু দুধটুকু খাবে । সর্বদা কি পিতা পুত্রের সাদৃশ্য পাওয়া যায় ? DNA তে থাকেন বটে তবে যাপনে আর স্বতন্ত্র্য শিল্প ভাবনায় তিনি অবাঞ্ছিত । সময়ের শ্যাওলা পড়ে হয়তো বয়েস বাড়ে , অন্ধকার বাড়ে তবে চোখ বদলায় না ! সেখানে চাই কবির মতো অনুপ্রবেশকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী নতুন রাস্তার খোঁজে চলা দূরন্ত ড্রাইভার । তবু নয় কুঠুরি আট দরজার প্লাস্টিক ঘরে ঘোরে সেই পৌরুষ মাটির সাপ । মনটা উদাস হয় ।
    কবির পথ হোক অন্তহীন । যতকাল এই অতৃপ্তি আছে ততকাল ভগ্ন নগরের কারিগর অনুপম আবিষ্কার নামে ওষধি বেচুক । কায়রোর রাজপথে ওজিম্যানডিয়াসের মতো সবাইকে ছাড়িয়ে....

    ReplyDelete
  3. শুভদীপ নায়কMarch 27, 2020 at 2:46 AM

    স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর দুটো কবিতা । প্রতিবার কবি অনুপম মুখোপাধ্যায় নিজেকে ভাঙে । তাঁর পরবর্তী সৃষ্টি তাঁর আগের সৃষ্টিকে ভেঙে ফেলে নতুন কবি হিসাবে তাঁকে বের করে আনে । তিনি একইসঙ্গে কারারুদ্ধ ও মুক্ত । একইসঙ্গে শূন্য ও পরিপূর্ণ । এ কবিতার মানচিত্র তাঁর আগের কবিতাগুলোর সঙ্গে কোনওভাবেই মেলে না । তবু, লেখা দুটি পড়ে মনে হল, এ কবিতা দুটি সৃষ্টিতে অমরত্ব লাভ করল ।

    ReplyDelete
  4. রণজিৎ অধিকারীMarch 27, 2020 at 2:51 AM

    অনুপমের কবিতা আমি পূর্বাপর পড়ে যাচ্ছি, সেই রোদ ওঠার আগে থেকে। অনেকেই কিন্তু অনুপমকে পড়েছেন রোদ ওঠার পরে।
    ফলে অনুপমের জার্নি আর ধকলটা আমি পাশ থেকে দেখেছি।
    এই সেদিনও একজন জিজ্ঞাসিলেন," কী পান অনুপমের কবিতায়? "
    আমি বললাম, আমরা যে কবিতা লেখার চেষ্টা করছি ইদানীং তা অনুপম ছাড়িয়ে এসেছেন তাঁর কিশোর বয়সেই।
    আর আমরা সামান্য প্যাকেজিং অদলবদল করে পুরোনো ধরনধারণই বাজারে ছেড়ে দিই।
    অনুপম এক থালায় দ্বিতীয়বার খেতে বসেননি কখনো।
    যাক এখানে আবার দুটি কবিতা পড়লাম।
    অনেকেই দ্বিতীয় কবিতাটির কথা বলেছেন।
    আমার কাছে এভাবে চিহ্নিত করার মূল্য তত নেই।
    একটা সার্বিক অভিযান আমি লক্ষ করি।
    ঠিক কোন মুহূর্তে যোদ্ধার অস্ত্রচালনা ঠিক আবার কখন ভুল... এভাবে না। বরং দেখুন এই কবির আশ্চর্য অগ্রগতি।

    ReplyDelete