কেল্লা ও অন্যান্য কবিতা

 


কেল্লা

 

যা কিছু মাটি ফুঁড়ে ওঠে তাই হল পাথরের কেল্লা

 

গাছ হোক টিলা হোক সুখী ঘরবাড়ি হোক

উপর থেকে ছুটে আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে তির

প্রাকার থেকে ঢেলে দেবে জ্বলন্ত তেল

যদি তুমি কাছে যাও অস্ত্র হাতে নিয়ে

 

যা কিছু আঘাত করে তাই হল পাথরের কেল্লা

প্রেম হোক ঘৃণা হোক সন্তানসন্ততি হোক

হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসবে রাশিরাশি স্ফুলিঙ্গ

কেল্লা দখল করতে না পারার ক্ষোভে

 

যা কিছু ভেঙে গিয়ে মাটিতে মিশে যায়

তাই হল পাথরের কেল্লা

 

মানুষের ভিতরকার শক্তির নিয়তি

 

 

 

 

বর্ণাশ্রম

 

তুমি আমি শুয়ে আছি হঠাৎ দেখে মনে হবে

সেতুর উপর চওড়া নদী উঠে এল

 

এখন সেতুর গাম্ভীর্য ভেঙে ছুটে যাচ্ছে জল

এখন দূরে দিগন্ত খুব গম্ভীর হয়ে আছে

 

দিগন্ত থেকে রেলিং ওঠে

রেলিং পেরিয়ে গেলে বামুন আরো বেশি বামুন হয়

কায়েত আরো কায়েত

 

শরীরের একফোঁটা রক্ত না মিশিয়ে

তুমি আমি যথাসাধ্য প্রেম করে যাচ্ছি

 

 

 

বোটানি

 

ঘুমের ভিতর থেকে তাকালে অর্ধেক জীবনকে পুরো মনে হয়

তীর্থযাত্রায় যাওয়ার আগে কেউ আলোকবর্ষ খুলে রেখে গেল

 

গলির অন্ধকার গভীর

গলায় ফুটে থাকা কাঁটাও গভীর

 

গভীর সত্যের লোভ যত করবে তত

 

স্বেচ্ছাচার শ্রুতিমধুর নয় বলে তুমি স্বরভঙ্গের মর্ম বুঝলে না

 

জ্বালা আর যন্ত্রণার ফ্রেম হারিয়ে গেলে

পাতা আর শিকড়ে প্রভেদ থাকে না

 

 

 

নরম কুঁড়েঘর

 

ঘাসের ভিতর কুচো কুচো স্বপ্ন ছড়িয়ে আছে

বারান্দায় না দাঁড়িয়েও ঘাস দেখা যায়

 

দিন যখন উঁকি দ্যায় রাতের প্রান্তকে শেষ বলা হয়

পায়ে যদি স্বপ্ন ফোটে রক্ত পড়ে না

 

পৃথিবী অপেক্ষায় আছে হাসতে হাসতে

 

খালি পায়ে হাঁটতে গিয়ে

কল্পনাকে মুক্তি দিতে গিয়ে

রূপকথার ঘাসজমিতে পিছলে যাবে তুমি

 

 

 

ছায়া

 

তোমার ঘরের দেওয়ালে আংশিক ছায়া পড়ছে আমার

 

জীবনের উজ্জ্বলতার অনেক উপরে

তোমার ঘর তোমার ঘরের ছাদ

ছাদ থেকে ঝুলে থাকা নতুন সিলিংফ্যান

 

অমঙ্গলের ছায়াগুলো কোথা থেকে আসে

সেইসব ছায়ার সঙ্গে আমার ছায়ার তফাৎ কী

 

আজীবন প্রশ্ন করেও কিছুই তো বলা হচ্ছে না

 

পুরনো দিনগুলো বন্দর ছেড়ে কোথায় চলে যাচ্ছে

নতুন জাহাজের মতো নয়

 

 

 

বাজনা

 

দূরে কোথাও মাটির বাসন বাজছে

মন্দিরের ঘন্টার মতো নয়

 

সীমান্তের কাঁটাতার থেকে সমুদ্র অবধি

পাহাড় বাক্স থলি বাক্য আর বাড়ি

মানুষ তার সম্পত্তি হাতে নিয়ে

থমকে দাঁড়িয়ে আছে

 

বাইপাস দিয়ে ছাগলের পাল ঢুকল শহরে

আঁস্তাকুড় পরিষ্কার করা হল গত শুক্রবার

 

সবকিছুর তারিখ থাকে

 

সম্পত্তি হস্তান্তরের

আবর্জনা সাফাইয়ের

রমণীর শরীর থেকে ছিটকে পড়া বীজের

 

দূরে কোথাও মাটির বাসন বাজছে

অশনি সংকেতের মতো নয়

 

 

                                        [চিত্রঋণ- উইলিয়াম ব্লেক]

 

 


2 comments:

  1. গোটা গুচ্ছটাই খুব ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  2. বাইরে থেকে কবিতা গুলো পড়লে তেমন কিছুই মনে হবে না কিন্তু যদি ভেতরে ঢোক তাহলে আটকে গেলে কথার জালে , কথার চালে ... চাল দিতে না জানলে দাবা খেলে লাভ কি

    ReplyDelete