ভাগ্য গণনা ও যা চাই ।। দুটি পুনরাধুনিক কাজ



ভাগ্য গণনা

জলপ্রপাতের সাদা হাঁ                 ১ রমণী উবু হয়ে ভাত রান্না করছে
হাতের রেখায় এমন কোনো ছবি কেন নেই

খাবো খাবো কিন্তু কবে খাবো
হে জ্যোতিষী কেন সবাই ইচ্ছেমতো রাশি পায় না

ভাষার বাইরে জীবন পায় না

ঘন নীল গোল সূর্য ছেঁড়াফাটা হলদে আকাশে
যদি উঠত সবুজের স্বভাব অভাব থাকত না

স্কুলবালিকার সাদা ফ্রক              আঙুরের দিকে যাচ্ছে আমার নখ
স্পর্শে হবে হরিণের নতুন উন্মোচন

আমার কোনো ক্রোধ নেই
মুখে আছে বাসি ভাতের স্বাদ

নামহীন জলপ্রপাত                   করতলে নতুন করে ভাত রান্না হচ্ছে




 
যা চাই

সুন্দর আঙুল হলেই সুন্দরের চিন্তাকে স্পর্শ করা যায় না
নিয়মিত নখ কাটলেও না

সবার ঊরু যাচাই করে দ্যাখ
কোনো ঊরু যোনি অবধি যায় না
লিঙ্গ ছুঁতে পায় না

জ্যোৎস্নারাতে হেঁটে যাওয়া একলা রমণী
কেউ কি তাকে বনপথে সরাই কিনে দেবে

নখ কাটছি                  নিজের পশুকে মেপে দেখছি

তোর যে ওই শরীরময় সাদা
অন্য কারও পাঁকের চেয়ে আলাদা কিছু নয়

সুন্দরের ভোরে তুই শেষ অবধি গোলাপের ডিজেলের গন্ধ


                                                            চিত্রঋণ- রাফায়েল




4 comments:

  1. খুব ভালো লাগল অনুপম।

    ReplyDelete
  2. ব্জাল লাগলো দুটোই অনুপম দা

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুটো লেখাই ভালো লাগলো

      Delete
  3. বাংলা সাহিত্যের যাঁরা সিরিয়াস কবি, তাঁরা চিরকালই বিপদ নিয়ে খেলা করেছে । কবিতার যতরকম প্যাটার্ন, এমনকী কোনও প্যাটার্নেই ফেলা যায় না, এমন কবিতাও যাঁরা লিখেছে, তাঁরা তো বটেই । বাঙালি কবিরা আধপেটা খেয়েও রোম্যান্টিসিজমের কবিতা লিখেছে, আবার মাছের ঝোলভাত খেয়েও স্যুরিয়ালিস্ত কবিতা লিখেছে । ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে কবিতা লিখতে গিয়ে দেখেছি কবিতার অদ্ভুত শক্তি আমাকে বাধ্য করে কী কবিতা লেখা হবে তা নির্বাচন করতে । যখন আমি রোম্যান্টিক কিছু লিখছি, তখন উত্তর আধুনিক বা আধুনিক কবিতার জন্য আমার ভাবনা বন্ধ হয়ে যায় । আবার উত্তর আধুনিক কিছু লিখতে বসলে আমার রোম্যান্টিসিজম আমি হারিয়ে ফেলি । কবিতার মধ্যে এই অদ্ভুত শক্তির ওপর দখল খুব কম কবিই রাখতে পারেন । মিলটন পারতেন একভাবনায় হিংস্র ও ভালবাসার কবিতা লিখতে । মাইকেল চেষ্টা করেও দুটোকে মেলাতে পারেননি, তবে কাছাকাছি গিয়েছিলেন । এই শক্ত কাব্যদর্শনের কাজে ক'জন কবি হাত দিতে পারেন ? এখনকার কবিদের মধ্যে অনুপম মুখোপাধ্যায় পারেন । নিজেকে ভেঙে নির্মাণ, প্রাতিস্বিক নির্মাণ, ---এ কাজ করা সব কবির পক্ষে সম্ভব নয় । যুগে ও কালে হাতে গোনা কিছু কবি আসে ,যাঁদের জীবদ্দশায় কোনো পাঠক থাকে না । তাঁদের পাঠক তৈরি হয় দীর্ঘকাল ধরে । কারণ ,তাঁরা গভীর শিল্পের সৃষ্টিকর্তা । তাঁদের পড়তে গেলে পাঠকের মধ্যে বিচারবোধ ও অভিজ্ঞতা থাকা চাই । অনুপম মুখোপাধ্যায় হল তেমন কবি, যাঁর লেখা মূল্য পাবে অনেক দেরিতে, অন্তত বাঙালি যেদিন নিজেদের হারিয়ে ফেলা শিল্পজ্ঞান পুনরায় উদ্ধার করতে শিখবে,সেদিন । এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাঙালি তার নিজের সময়কে কখনও বুঝতে পারেনি,চিনতে শেখেনি । চিনেছে অনেক পরে ,বুঝেছে অনেক দেরিতে । যে বাঙালিদের কাছে উনিশ শতকের লেখা এখন বিশ শতকে পৌঁছে বর্তমান, তাদের কাছে অনুপম মুখোপাধ্যায় হল ভবিষ্যতের কবি ।
    অনুপম মুখোপাধ্যায়ের যে কবিতা কিছুদিন আগে পড়লাম, তাঁর মূর্তি এক ছিল । আজ যাঁর লেখা পড়লাম সে আরেক অনুপম মুখোপাধ্যায় । যে অনুপম মুখোপাধ্যায়ের গদ্য পড়ি, সে আরেক, যার প্রবন্ধ পড়লাম 'একদিন'-য়ের সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় ,সে আরেক অনুপম মুখোপাধ্যায় । তিনি এটা পারেন । এই দুটি কবিতা সৃষ্টিতে চিরকালের জন্য গেঁথে গেল । নিজেকে ভেঙে টুকরো করে ফেলতে পারার ক্ষমতা কবির মধ্যে থাকা চাই, অন্তত যে কবি পৃথিবীর বুকে চিরকাল থেকে যাওয়ার জন্য তাঁর জমি খুঁজতে এসেছে, তাঁর তো চাই-ই চাই ।

    ReplyDelete