কবি আল মাহমুদ। চিত্রঋণ- আন্তর্জাল |
আল মাহমুদের গোত্র নির্বাচন কি খুব জরুরি? কোন হাটে আপনি বেচবেন তাঁর
গান? তাহলে বলা যাক, আমরা জানি, কবি দুই প্রকার। এক কবি শিবের অনুচর, তিনি ভাষার
প্রান্তে শ্মশানে-মশানে থাকেন, নির্জীব আটপৌরে ভাষাকে ঘা মেরে বাঁচান, কিন্তু রাষ্ট্র
ভালো চোখে নেয় না, মৃত্যুর আগে তাঁকে স্বীকৃতিই দিতে চায় না। আরেক কবি দক্ষরাজের
অনুচর, ভাষানগরের রক্ষক, ভাষার রাষ্ট্রীয় রূপটিকে লক্ষ্য করে এই কবি কাব্যরূপী
অভয়ারন্য রচনা করেন, তিনি সাংস্কৃতিক কর্মী, তিনি সভা ও মঞ্চবাসী, রাষ্ট্রের
নয়নমণি, রাষ্ট্র তাঁকে বিবিধ শিরোপায় ভূষিত করে ও নিজের অভিভাবক জ্ঞান করে, খবরের
কাগজ এবং নিউজ চ্যানেলে তাঁর প্রাত্যহিক দেখা আমরা পেয়েই থাকি। এই দুইপ্রকার কবির
মধ্যে উভয়ই নিজ-নিজ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, এবং উভয়েই স্থায়ীত্বের আশা করতে পারেন,
লালন সাঁই অমর হয়েছেন, আবার ভারতচন্দ্র রায়ও তো বিস্মৃত হননি।
এর মধ্যে কিছু কবি আসেন,
যাঁদের আমরা এই প্রকারভেদের মধ্যে আঁটাতে পারি না। তাঁরা এরকম কোনো সীমায় থাকেন
না। নগর বা শ্মশান... কোথায় তাঁরা আছেন, কোনটা তাঁরা এড়ান, রাজসভা নাকি রাস্তা,
দেশ নাকি রাষ্ট্র... কোথায় তাঁরা শোনাচ্ছেন তাঁদের কবিতা, আলাদা করে উল্লেখ করা
অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কবিরা প্রবল, এঁরা নিজেদের অবস্থান নিজেরা তৈরি করেন এবং
সমাজের মনোযোগ স্পর্ধাভরে ছিনিয়ে নেন। আল মাহমুদ এমনই একজন কবি। এরকমই কবি
হুইটম্যান, হোসে মার্তি, লোরকা, পাবলো নেরুদা, নজরুল ইসলাম। হ্যাঁ, আমাদের
সৌভাগ্য, আমাদের সমসময়ে আল মাহমুদ এমনই একজন কবি। এবং ‘সোনালি কাবিন’ হল সেই
কাব্যগ্রন্থ যা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে একীকৃত করেছে, এবং তার নাম রেখেছে ‘বাংলা’। আল মাহমুদ তাই একাধারে লালন আবার ভারতচন্দ্র। তিনি প্রকৃতই এক নাগরিক
বাউল।
কাকে বলে বাংলা ভাষা? সম্ভবত
কেউই অকপট ও নিশ্চিত উত্তর দিতে পারেন না। অন্ধের হস্তিদর্শনের অবস্থা হয় আমাদের
এই প্রশ্নটির সামনে। একজন ঋত্বিক ঘটকও সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না।
‘সোনালি কাবিন’-এর ভাষা ২০১৫-এ একজন কলকাতাবাসী, একজন মেদিনীপুরবাসী, একজন
হুগলিবাসী কতটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন? একজন যশোরবাসী বা একজন ঢাকাবাসীর তুলনায়
তাঁর সেই সুযোগ বেশি, নাকি কম? আল মাহমুদের এই অপরূপ কাব্যগ্রন্থটি বাংলা, কিন্তু
সেই বাংলা কি কোনো ভাষা নাকি সংস্কৃতি, নাকি উভয়ই? বাংলা ভাষা কিন্তু আদৌ আবহমান
নয়, যদি সেই তত্ত্ব মাথায় রাখি যে একই নদীতে দুবার স্নান করা যায় না। সে দেশ এবং কালের
দ্বারা খন্ডিত। বিশেষ দেশ এবং কালেই তার বিহার। আজ আমরা চর্যাপদ বুঝতে পারি না,
আমাদের বৈষ্ণব পদাবলী বুঝতে দস্তুরমতো সমস্যা হয়, এমনকি কবিকঙ্কণের ভাষাও বুঝি আজ
আমাদের করায়ত্ত নয়, যদিও ওগুলো বাংলা ভাষাতেই লেখা। যেমন হোমো স্যাপিয়েন্সকে নিয়ে
আলোচনা করতে গেলে ক্রো ম্যাগনন, নিয়ান্ডারথাল এমনকি ইয়েতিকে নিয়েও আলোচনা করতে হয়,
জানতেই হয় তুষারযুগের কাহিনি, ঠিক সেভাবেই ‘সোনালি কাবিন’-এর ভাষায় কিছুটা তো
চর্যাপদ, কিছুটা ময়মনসিংহ গীতিকা লেগে থাকতেই পারে, লেগে থাকতেই পারে কিছু বীরভূম
কিছু কোচবিহার কিছু পাবনা বা খুলনা। তাদের শনাক্তিকরণ
জেনেটিক উপায়ে করতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে কার্বন ডেটিং-এর আশ্রয় নিতে হবে।
কিন্তু ‘সোনালি কাবিন’ যে বাংলায় লেখা, সেখানে কি কৃষ্ণনগরীয়
প্রাতিষ্ঠানিক বাংলা ভাষার লেনদেন আছে? অবশ্যই আছে। স্বীকৃত সামাজিক বাক্যবিধি ও
শব্দসংস্থানই আমরা পাই এই বইটিতে। যেমন ধরা যাক ‘পালক ভাঙার প্রতিবাদে’ কবিতায়-
আমি যেন সেই পাখি, স্বজন পীড়নে যারা
কালো পতাকার মতো হাহাকার করে ওঠে, কা-কা
আর্তনাদ ভরে দেয় ঘরবাড়ি, পালক ভাঙার
উপায়হীন প্রতিবাদে
আকাশ কাঁপিয়ে কাঁদে
ছত্রখান হয়ে উড়ে উড়ে
ঘুরে ঘুরে পাখসাটে
পিষ্ট প্রায় সঙ্গীর দশায়।
এই কবিতায় আমরা অপ্রচলিত কিছুই পাই না। যে ভাষায় লিখেছেন প্রেমেন্দ্র
মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, সমর সেন বা যে কোনো কবিই, এ হল সেই আন্তর্জাতিক ভাষা। কাকের
সঙ্গে কালো পতাকার উপমা সুষম হলেও বিস্ময়কর নয়। কিন্তু, এর ফলেই, আপামর জনসাধারণের
সঙ্গে বাক্যালাপে আল মাহমুদকে হোঁচট খেতে হবে না। আপামর তাঁর প্রতি অভিমান দেখায়
না, তাঁকে সম্ভ্রান্ত ভেবে দূরে সরিয়ে দেবে না, আবার পোড় খাওয়া সমালোচকও তাঁকে অবজ্ঞার
স্পর্ধা খুঁজে পাবেন না।
আল মাহমুদ সেটাই চেয়েছেন,
এবং পেরেছেন।
‘সোনালি কাবিন’ নামক সনেটগ্রন্থটির কবি হয়ে ওঠেন তাঁর দরিদ্র দেশ ও
পীড়িত জনগণের আয়না, আবার তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বাঙালিরাও এই বইটিকে সমান আপন
করে নিতে পারেন। বইটি ১৯৭৩-এ ঢাকায় প্রকাশিত হয়েছিল, উল্লেখ্য যে বইটি তার আগে ১৯৭১-এ
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক সংক্ষিপ্ত আকারে কলকাতায় বেরিয়েছিল এবং দ্রুত নিঃশেষ
হয়ে গিয়েছিল। এই বইয়ে আসলে দুই বাংলা সমান দাবি রেখেছে, এবং মীমাংসায় আসতে সমস্যা
হয়নি। এই বই পড়েননি এমন কবিতাপ্রেমী দুই বাংলায় বিরল বলেই আমার ধারণা। ঋত্বিক
ঘটকের যেটা তাত্বিক ব্যর্থতা, সেখানেই আল মাহমুদের কাজের সার্থকতা। তাঁর কবিতায়
খুব অনায়াসেই হয়ে বসে আছে দুই বাংলার মিলন। কবিতাই সেটা পারে। সিনেমাকে সেটা করার
জন্য কবিতারই দ্বারস্থ হতে হয়। আল মাহমুদের সঙ্গে একমাত্র অবিশ্যি পিয়ের পাওলো
পাসোলিনিকেই আমি মেলাতে পারি বাংলা কবিতায়। পাসোলিনির ‘ট্রিলজি অফ লাইফ’ পর্বের
সিনেমাগুলো আমার বারবার মনে পড়ে যখন তাঁর ‘সোনালি কাবিন’ আমি পড়ি, এবং উল্টোটাও
ঘটে।
বলা ভালো, এই কাব্যগ্রন্থে
আল মাহমুদ স্বয়ং হয়ে উঠেছেন একটি খন্ডিত বাংলা ভাষা ও খন্ডিত বাংলা সংস্কৃতির একীভূত
শুদ্ধতম রূপ যা নিজে দেশ ও কালোত্তীর্ণ। এই কাব্যগ্রন্থটির পাশে একমাত্র
জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’-ই বসার দাবি করতে পারে, কিন্তু আমাদের মনে রাখা
ভাল, ‘রূপসী বাংলা’ কিন্তু তার কবির স্বীকৃত কাব্যগ্রন্থ নয়, সে মরণোত্তরভাবে
প্রকাশিত। তাই, ‘সোনালি কাবিন’ বাংলা কবিতায় এক অমোঘ ও অদ্বিতীয় অবস্থানের
অধিকারী। যে দেশকাল থেকে সে কথা বলছে, তা খন্ডকাল, অবশ্যই, কিন্তু তা স্পেসকে
মুচড়ে দিয়ে আমাদের অনায়াসে টেনে নেয় নিজের কোলে। এই ক্ষমতাই কালকে জয় করতে পারে।
‘সোনালি কাবিন’ যে কোনো দেশকালে তাই একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ।
‘বাংলা’ এখানে একটি দেশ, কোনো রাষ্ট্র নয়।
এবং, বাংলা শব্দটি এখানেই
ধর্মনিরপেক্ষ। যদি ‘সোনালি কাবিন’-এর এই কবিতাটি পড়ি-
জাতিস্মর
আমি যতবার আসি, মনে হয় একই মাতৃগর্ভ থেকে পুনঃ
রক্তে আবর্তিত হয়ে ফিরে
আসি পুরনো মাটিতে
ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া শব্দে
দুঃখময় আত্মার বিলাপ
জড়সড় করে দেয় কোনো দীন
দরিদ্র পিতাকে।
আর ক্লান্ত নির্ভার
আরামে
মায়ের সজল চোখ মুদে আসে।
কখন, কিভাবে যেন
বেড়ে উঠি
পূর্বজন্মের সেই
নম্রস্রোতা নদীর কিনারে।
#
কে কোথায় জাতিস্মর?
সমস্ত প্রাণীর মধ্যে আমি
কি কেবলই
স্মরণে রেখেছি স্পষ্ট কোন
গাঁয়ে জন্মেছি কখন?
অথচ মানুষ
নিজের পাপের ভারে
শুনেছি জন্মায় নাকি পশুর
উদরে-
বলে ত্রিপিটক।
#
কী প্রপঞ্চে ফিরে আসি, কী
পাতকে
বারম্বার আমি
ভাষায়, মায়ের পেটে
পরিচিত, পরাজিত দেশে?
বাক্যের বিকার থেকে তুলে
নিয়ে ভাষার সৌরভ
যদি দোষী হয়ে থাকি, সেই
অপরাধে
আমার উৎপন্ন হোক পুনর্বার
তীর্যক যোনিতে।
অন্তত তাহলে আমি জাতকের
হরিণের মত
ধর্মগন্ডিকায় গ্রীবা রেখে
নির্ভাবন দেখে যাবো
রক্তের ফিনকিতে লাল হয়ে
ধুয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
নির্ভয়ে, নির্বাণে।
এই কবিতা যে একজন মুসলিম লিখেছেন, যতই থাক পশুজন্ম, তীর্যক যোনি,
ত্রিপিটক বা জাতকপ্রসঙ্গ, ‘বাক্যের বিকার’-এর মতো হিন্দু ধারণা, সেই মনঃস্তাত্বিক ছাপ আমাদের নজরের আড়াল
হয় না, প্রথম স্তবকেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী ‘দীন দরিদ্র
পিতা’ লিখবেন না, ‘পুরনো মাটি’ লিখবেন না, ‘দুঃখময় আত্মার বিলাপ’ লিখবেন না, এগুলো
একান্তভাবেই সাংস্কৃতিক উচ্চারণ। হ্যাঁ পাঠক, আল মাহমুদের এই কাব্যগ্রন্থে আত্মা
হয়ে আছে রুহ। সম্প্রদায় আদতে সংস্কৃতি হয়ে আছে। আবহাওয়া হয়ে আছে ধর্মের প্রসঙ্গটি।
এক আশ্চর্য পারস্য এসে লেগে গেছে বাংলাদেশের মাটি ও রঙে। সন্ধানী জন তার আমেজ
পাবেন। ‘ভাষার সৌরভ’... শুধু একবার দেখুন, ভাষাতে যে সৌরভ থাকে একমাত্র সেই কবিই
বলতে পারেন যাঁর আত্মা কোথাও না কোথাও ছুঁয়ে আছে ওমর খৈয়ামকে, ছুঁয়ে আছে উড়ন্ত
গালিচা। সেই গালিচা উড়ে যাচ্ছে শস্যশ্যামলা সেই দেশটির উপর দিয়ে যা অনেক আম আর
কাঁঠালে ভরপুর, পুকুরে পুকুরে যেখানে রুই আর কাতলার ভিড়, কিন্তু চিল আর শকুনেরা
আকাশ ছেয়েছে, মহাকাশে উঁকি দিচ্ছে খাদ্যলোভী রাহু।
এই কবি জাতিস্মর, কিন্তু তাঁর পূর্বজন্ম জীবনানন্দীয়ভাবে সত্যযুগ নয়,
যেন আগের জন্মেই ছিল যথার্থ জীবন, সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মতো চেষ্টাকৃত নয়, তাঁর
পূর্বজন্ম এই বাংলাদেশেই, কিন্তু এমন এক হতাশ ও চিরবঞ্চিত বাংলাদেশে যে তিনি কোনো
জন্মেই পাননি তাঁর আশ্চর্য প্রদীপ। আল মাহমুদের ইতিহাসচেতনা এমন নয় যে অতীতেই রয়ে
গেছে ফুরিয়েছে গৌরবের কারন, নস্টালজিয়া আর ইতিহাসভাবনা কখনই এক হয় না তাঁর কলমে।
সমসময়টাও যে এক চলমান ইতিহাস, ভাল-মন্দে মেশা যেমন ছিল যেকোনো কালখন্ডই, সেটাই বরং
মনে হয়। যে ব্রতকথা আজও টিকে আছে, সে কোনো সৌধের চেয়ে কম মূল্যবান নয়, যে পালাগান এই মুহূর্তে কানে
এসে লাগছে, সে কিছু কম যায় না বিস্মৃত কোনো অত্যাচারী রায়রায়ানের সফেদ ঘোড়াটির আওয়াজের
চেয়ে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা ঘটে চলেছে, তা তো ঘটছে নিজের মাতৃভূমির
অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যের সঙ্গে সংস্পর্শ রেখেই। ‘পৃথিবীর সবকটি সাদা কবুতর / ইহুদী
মেয়েরা রেঁধে পাঠিয়েছে মার্কিন জাহাজে’... এই আন্তর্জাতিক উচ্চারণ, তথাপি এই
বাঙালি আবিষ্কার, এই আল মাহমুদ।
‘সোনালি কাবিন’
কাব্যগ্রন্থ একজন বাঙালি বেদুইনের মুখোমুখি করে দেয় আমাদের। একই সঙ্গে মরু-সরলতা ও
শ্যামল অলজ্জতা আমরা দেখতে পাই কবির চরিত্রে। এই ঘটনা একমাত্র নজরুল ইসলামের মধ্যে
ঘটতে পেরেছিল, কিন্তু তা অন্য মাত্রায় ও গুণে। আল মাহমুদ একজন পুরুষজাতীয় কবি, ঠিক
ততটাই যতটা একজন ওমর খৈয়াম। সেই
পুরুষ, যাদের বঙ্কিম চন্দ্রের উপন্যাসে আমরা রোদন করতে
দেখি বটে, কিন্তু কাঁদতে দেখি না। নিজের কামপ্রবণতাকে, নিজের হরমোনের বৈশিষ্টকে
তিনি নিজের কবিতার ইঞ্জিন নয়, পেট্রল বা ডিজেল নয়, মবিল করেছেন। দেহতত্ত্বের
প্রসঙ্গ আকাদেমিক চত্বরের আলোচনায় আল মাহমুদের কবিতার ক্ষেত্রে বারবার উঠেছে,
অধ্যাপকরূপী একচক্ষু হরিণদের দ্বারা। বাংলা সাহিত্যের গবেষকরা যৌনভাবে বড্ড বেশি
সৎ। বাঙালি বিদ্যায়তনে সেটাই স্বাভাবিক। ঘটনা হল, আল মাহমুদের কবিতায় কামপ্রসঙ্গ
আদতে একটুও না থেমে সমস্তটা ওড়ারই নাম, নিজের বাসনাকুসুমটিকে নিয়ে শরমিন্দা না
হওয়ার নাম। জলপাই পাতায় এই কবি আড়াল করেন না নিজের মানুষী পরিচয়, সেই পরিচয়
অনুজ্জ্বল হতে পারে, কিন্তু উপাধিবিহীন। শেলি-র সেই পশ্চিমা ঝড় যেন তাঁর সব উজাড়
করে ভালবাসার বাসনা। আর, কোন ফাঁকে যেন এক হয়ে যান বৃন্দাবনের সেই কালো কিশোর
প্রেমিকটি লায়লার প্রেমিক মজনুর সঙ্গে। মৈথুন হয়ে ওঠে পূজার এক নাম, ইবাদতের।
এমনকি এক অসতী, এক বিরাণ নারী, আদতে তিনি এক গুঁড়িয়ে যাওয়া বসতি, এক পরিত্যক্ত
দরগাহ, তাঁর সিঁড়িতেও পাওয়া যায় দুষ্প্রাপ্য বিশ্রাম।
পুরুষের কামনা যে আদতে এক অর্ঘ্য, ‘সোনালি কাবিন’ পড়ে বুঝতে পারি।
তুলসীতলার প্রদীপ আর পারস্য প্রদীপের মিলন ‘সোনালি কাবিন’-এর প্রতিটি
কবিতায় ঘটতে পেরেছে। আজানের সঙ্গে মিলে গেছে আবাহনের সুর। এই কবিতাগুলো
শব্দদেবতাদের দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে। অপরিসীম বিষাদের অভিজ্ঞতা এবং আনন্দের
বাস্তব ও কাল্পনিক স্মৃতিগুলো এখানে মুখর হয়েছে, যেন এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি অমল
উচ্চারণ আসলে একেকজন পাঠকের হৃদয়ে আল মাহমুদের একেকটি নতুন জন্ম ঘটাবে। একেক
পাঠকের সঙ্গে তাঁর একেক বিহার, রাসলীলার কানুর মতো, ঠিক।
darun laglo.......anupamda...
ReplyDeleteপ্রত্যয়পূর্ণ লেখা।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো। এরকম তত্বীয় ব্যাখ্যা খুব কম পেয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।
ReplyDelete