ট্রেন ও স্টেশন
বৃষ্টি
ধরে গেলে আমি স্টেশনে নেমেছি
দেখেছি
তখনও মেঘে জল জমে আছে
সমুদ্রের ধারে
থাকে যেসব স্টেশন
উত্তাল
ঢেউ ওঠে ট্রেন দাঁড়ালেই
স্টেশন নিঃসঙ্গ থাকে পাহাড়ের গায়ে
প্লাটফর্মে বয়ে
যায় আকুল বাতাস
কিছুদূরে গমক্ষেত বুকফাটা রোদ
দল
বেঁধে ছুটে আসে গৃহবিমুখেরা
আঞ্চলিক ছাপ
থাকে স্টেশনের গায়ে
পুরো
এলাকাটা তুমি বুঝে নিতে পারো
শহরের
অংশ নয় স্বয়ং শহর
স্টেশনে যে
ট্রেন থামে শহরেই থামে
ট্রেনে চেপে যেতে যদি সূর্যোদয় হয়
যেন কোনো পুস্তকের অলংকার হল
যেন এক চিরন্তন কাহিনির শেষে
অন্য কোনো উপন্যাস দাঁড়িয়ে রয়েছে
প্রেমের কিছুটা মুখ
কুয়াশায় জেগে আছে মহিষের শিং
স্বপ্ন আর বুদ্বুদের শাশ্বত জাহাজ
প্রেমের কিছুটা মুখ ঘৃণা দিয়ে ঢাকা
ছেঁড়া বাতাসের গিঁট সবুজ পাথরে
তুমি যে আলাদা নও সে কথা জেনেও
কেন আমি বারবার তোমাকে চেয়েছি
যেন কোনো নাবিকের অবসন্ন হাতে
নোঙরের ভার আরো অসহ্য লেগেছে
সোনালী মাছের খোঁজ তারও যেন আছে
জলের কিনারে ওই ফুল ডুবে আছে
কুসুম কাহিনি
আলো ছাড়া পৃথিবীতে পুস্তক থাকে কি
অন্ধকারে পড়া যাবে সেই বই দাও
যে নদী হাজির নেই সেও তো শরীর
ভয় নেই আমি কোনো ডিটেকটিভ নই
অঘোর ঘুমেও তুমি কেঁপে উঠে জাগো
তোমাকে জাগাই আর অনুতাপ করি
কখনো কি দাবানল মধুর লাগেনি
মাটির প্রদীপে পোড়ে অরণ্য যখন
সাদা সাদা ফুলগুলো ছাই হয়ে যায়
জ্বলন্ত পাহাড়ে সেই অচেনা গুল্মের
কাচ যত স্বচ্ছ হয় ফুল তত নয়
তবু দগ্ধ ফুল দেখে নতজানু হই
নির্নিমেষ
গুলি খেয়ে উড়ে যাওয়া পাখির ডানায়
আকাশের নীল রং উঁচু হয়ে আছে
আমি তো তারিফ করি জনবিরলের
পাখি হয়ে দেখি আমি তোমার পৃথিবী
তোমার তরল মুখ দিগন্তের পাশে
কত দেশান্তর নিয়ে চেয়ে আছে চুপ
যাতনার মন্ত্রী নেই সেনাপতি নেই
দ্যাখো না কোথাও আর রক্তপাত নেই
কেবল পিপাসা আছে ভাদ্রের দুপুরে
স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে জলের গেলাস
তুমি সেসবের দূরে নদীর সেলাই
যে সূচে কুয়াশা জমে রোদ হেরে যায়
প্রেতিনীর কবিতা
বাতাসের শেষ শব্দে জোনাকি উড়েছে
তার পাখা ডুবে গেলে কী ক্ষতি তোমার
গুলমোহরের জলে শরীর ধুয়েছ
সন্ধ্যার দীঘিতে খোঁজো জোছনার মাছ
কার যে প্রেমিকা ছিল শ্যামলী শাসমল
তুমিই শ্যামলী না কি ঠিক করে বলো
আঙুল ডুবিয়ে দ্যাখো ঈষৎ গভীরে
কত দীর্ঘ জল হল কতটুকু জল
বন্দুকের শব্দ হয় হরিণীর লাফ
জলা থেকে নিঃস্ব হয়ে রমণী ফিরেছে
মনের মলাটে দুটো স্তন লেগে ছিল
তাই রাতে বৃষ্টি হল মেঘ পুড়ে গেল
নাবিকী
শালিখের ঠ্যাঙে থাকে যতটা কমেডি
ততটা অস্থির তুমি হবে না কখনো
মনোময় ঘাম ছিল তোমার ঊরুতে
মূক হয়ে লেগে ছিল মুছে নিয়েছিলে
অন্য কোন বন্দরের স্বপ্ন দেখে আজ
নাবিকের প্রাণ তবু কেড়ে নিতে চাও
তুমি নখ তুমি দাঁত তুমিই আঘাত
অর্ধেক জেগেছে নৌকো পুরোটা জাগাও
কাহিনি
কেন আমি যাই শুধু তোমার দিকেই
যেমন স্টিমার যায় কুয়াশার বুকে
খোলস ছাড়ার পর যেমন দাঁড়াশ
চলে যায় সারা গায়ে যন্ত্রণার টান
উপন্যাস পড়ে আমি তোমাকে ভেবেছি
তুমি তো নায়িকা নও রূপকথা নও
কাহিনি চেনো না তুমি অথচ তাকাও
তোমার চোখের নাম ভ্রমণ রেখেছি
ভ্রূণ
পাখির দরজা খুলে খাঁচা উড়ে গেছে
নীল ইস্পাতের খাঁচা নিরুদ্দেশ আজ
আমি তো ভেবেছি তুমি খুব রেগে আছো
রাগের কারণ বলে আঘাত করোনি
কাচের ওদিকে দ্যাখো ট্রাফিকের চাপ
শব্দহীন হয়ে আছে কাচের এদিক
বাঁশি কত নিরাপদ রাখালের ঠোঁটে
নিজেকে হঠাৎ যেন ভ্রূণ মনে হয়
তোমার শহর
সমুদ্রের আভা নিয়ে জ্বলে আছে ঘর
তার আলো তুমি ভাঙা হৃদয়ে নিয়েছ
ঘরে ধুলো ভরে আছে ভূতুড়ে দর্পণ
প্রাচীন কামান আজ পালিশ করেছ
চিৎকার করেছ তুমি শীৎকার করেছ
সরোবর ফাঁক করে মন্দির হয়েছ
দূরে কোন গাছ থেকে ঝরে যায় পাতা
বাতাসে পেয়েছে সে কি রোদের উপমা
শরতে বিকাল জুড়ে যা কিছু মানায়
তোমার শহরে আমি সে সবই দেখেছি
(ছবি- অনুপম)